শনিবার ৪ অক্টোবর ২০২৫ - ১১:১২
রেহানাহ: প্রকৃতির সৌন্দর্য থেকে আধুনিক ঝলক

মানুষের জীবনে সৌন্দর্য ও সজ্জার প্রতি আকর্ষণ স্বাভাবিক প্রবৃত্তি। তবে এর প্রতি অতিরিক্ত আসক্তি কিংবা সমাজ ও গণমাধ্যমের চাপিয়ে দেওয়া মানদণ্ড অনুসরণ করলে নারীর প্রকৃত ও মৌলিক পরিচয় হারিয়ে যেতে পারে। তাই সৌন্দর্যের একটি নতুন সংজ্ঞা প্রয়োজন—যা নারীর অন্তর্নিহিত মর্যাদা ও স্বকীয়তাকে তুলে ধরবে, বাহ্যিক দৃষ্টিভঙ্গির ওপর নির্ভরশীল হবে না।

হাওজা নিউজ এজেন্সি: নারী মানবসভ্যতার ইতিহাসে সবসময়ই জীবন সৃষ্টির ধারক এবং পরিবার, সমাজ ও সংস্কৃতির প্রধান স্তম্ভ হিসেবে ভূমিকা রেখেছেন। তাঁর মর্যাদা কোনো সংকীর্ণ সামাজিক বা সাংস্কৃতিক সংজ্ঞায় সীমাবদ্ধ নয়।

ইসলামি জ্ঞানচিন্তায়, যা কোরআন ও নববী সুন্নাহর গভীর শিক্ষার উপর ভিত্তি করে, নারীর অবস্থান অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। ইমাম আলী (আ.) নারীকে এভাবে অভিহিত করেছেন: "আল-মারআতু রেইহানা" — অর্থাৎ নারী হলো রেহানাহ (সুগন্ধি ফুল)। এই বর্ণনা নারীর অন্তর্নিহিত মর্যাদা ও মানবিক পরিচয়ের প্রতীক, যা ক্ষণস্থায়ী ও বাহ্যিক মানদণ্ডের ওপর নির্ভর করে না।

রেহানাহ থেকে গ্ল্যামার
কিন্তু আধুনিক সময়ে সাংস্কৃতিক পরিবর্তন ও ভোগবাদী প্রবণতা নারীর অবস্থানকে বিকৃত করেছে। ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি ও বিজ্ঞাপন নারীকে “গ্ল্যামারাস অবয়ব”-এ পরিণত করেছে—যেখানে গুরুত্ব দেওয়া হয় শুধু বাহ্যিক সৌন্দর্য, যৌন আকর্ষণ ও কৃত্রিমভাবে নির্মিত আদর্শ রূপে।

এই প্রবণতা নারীদের এক অন্তহীন প্রতিযোগিতায় ঠেলে দেয়। তারা শারীরিক ও মানসিক সমস্যায় ভোগে, আত্মবিশ্বাস হারায় এবং পরিবার ও সমাজে তাদের আসল ভূমিকা থেকে দূরে সরে যায়। প্রসাধনী শিল্প ও সার্জারি ব্যবসা এই প্রতিযোগিতাকে আরও উসকে দেয়, যার ফলে নারীর মর্যাদা ক্ষুণ্ন হয়ে তিনি ভোগ্যপণ্যে রূপান্তরিত হন।

সমাধানের পথ
যদিও সৌন্দর্যের প্রতি ঝোঁক স্বাভাবিক, কিন্তু এর অতিরিক্ত আসক্তি রোধে সমাজে সচেতনতা ও দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন প্রয়োজন। এজন্য—

মিডিয়া সাক্ষরতা বৃদ্ধি: মানুষকে বোঝাতে হবে যে অধিকাংশ প্রচারিত ছবি ও আদর্শ আসলে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে সাজানো, বাস্তব নয়।

শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ: পরিবার, স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য শিক্ষা কার্যক্রম চালু করতে হবে, যাতে আত্মমর্যাদা ও আত্মবিশ্বাস গড়ে ওঠে।

গণমাধ্যমের ইতিবাচক ভূমিকা: নারীকে ভোগ্যপণ্য নয়, বরং নৈতিক, বুদ্ধিবৃত্তিক ও সৃজনশীল ভূমিকায় উপস্থাপন করতে হবে।

রেহানাহর মূল পরিচয়ে ফিরে যাওয়া মানে সৌন্দর্য অস্বীকার করা নয়; বরং এর প্রকৃত ব্যাখ্যা দেওয়া—যেখানে নারীকে তার অন্তর্নিহিত মর্যাদা, নৈতিকতা ও মানবিক গুণাবলির আলোকে সম্মান করা হয়। গ্ল্যামার সংস্কৃতি নারীর সম্মান কমিয়ে দেয় এবং তাকে বাহ্যিক চাকচিক্যের প্রতিযোগিতায় বন্দি করে রাখে।

এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে ও নারীকে সৃষ্টির রেহানাহ হিসেবে তার প্রকৃত মর্যাদায় ফিরিয়ে আনতে জাতীয় পর্যায়ে দৃঢ় উদ্যোগ প্রয়োজন—মানসিকতা পরিবর্তন, গণমাধ্যম সংস্কার, শিক্ষা ও সংস্কৃতিচর্চার মাধ্যমে।

চূড়ান্ত লক্ষ্য হওয়া উচিত নারীর ক্ষমতায়ন—যাতে তিনি নিজের পরিচয় ও মূল্যবোধ সংজ্ঞায়িত করেন জ্ঞান, দক্ষতা, নৈতিকতা ও মানবিকতার আলোকে, কেবল বাহ্যিক চাকচিক্যের ভিত্তিতে নয়। এভাবেই এমন এক সমাজ গড়ে উঠবে, যেখানে নারী তার প্রকৃত, কার্যকর ও গঠনমূলক ভূমিকা সম্পূর্ণভাবে পালন করতে পারবেন।

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha